উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র 2017 | H.S Bengali Question Paper 2017 | West Bengal Class12 Previous Year Question With Answe! H.S Bengali Question Paper 2017
HS Previous Years Question With Answe | উচ্চমাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | West Bengal Class12 Previous Year Question With Answe! H.S Bengali Question Paper 2017
নমস্কার বন্ধুরা,
আজ তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, HS Previous Years Question Bengali Paper; যেটির মধ্যে তোমরা HS উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিগত নয় বছরের (2017) প্রশ্নপত্র পাবে। যেগুলি তোমরা প্র্যাকটিসের মাধ্যমে HS উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারবে। এছাড়াও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারন গঠন করতে পারবে।
নীচে HS Previous Years Bengali Question Paper দেওয়া আছে, সেখান থেকে বিনামূল্যে পড়ে নেবে এবং প্র্যাকটিস শুরু করে দাও।
বিভাগ – ‘খ’ (নম্বর- ৩০)
১. সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করাে : ১x১৮=১৮
১.১ বাংলা বাক্যের পদ-সংস্থানের স্বাভাবিক ক্ৰমের নিয়ম—
(ক) কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া (খ) কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম
(গ) কর্ম-কর্তা-ক্রিয়া (ঘ) কর্ম-ক্রিয়া-কর্তা
উত্তরঃ (ক) কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া।
১.২ অস্বচ্ছ জলরঙের আঁকা ছবিকে বলে—
(ক) ওয়াশ (খ) গুয়াশ (গ) স্কেচ (ঘ) পট
উত্তরঃ (খ) গুয়াশ
১.৩ “আমিও তাে মােল্লার সঙ্গে একই বাসে আজ শহরে গিয়েছিলুম।”— কে শহরে গিয়েছিল ?
(ক) ফজলু সেখ (খ) করিম ফরাজি
(গ) নিবারণ বাগদি (ঘ) ভটচাজ মশাই
উত্তরঃ (ঘ) ভটচাজ মশাই
১.৪ “তার নাকি দারুণ বক্স অফিস।”— কীসের ?
(ক) প্রেমের নাটকের
(খ) সামাজিক নাটকের
(গ) দুঃখের নাটকের
(ঘ) হাসির নাটকের
উত্তরঃ (ঘ) হাসির নাটকের।
অথবা,
“রাজনীতি বড়াে কূট।”—কথাটি বলেছিলেন—
(ক) রজনী (খ) মহম্মদ (গ) কালীনাথ
(ঘ) কিং লিয়র
উত্তরঃ (ক) রজনী।
১.৫ “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত….”—
(ক) স্বভাব নাটক (খ) বিভাব নাটক
(গ) অভাব নাটক (ঘ) ভাব নাটক
উত্তরঃ (গ) অভাব নাটক।
অথবা,
“ঠিক আছে ফেলে দিন না আবার দেব”— কী ফেলে দিতে বলা হয়েছে ?
(ক) খাবার (খ) সিগারেট (গ) জল (ঘ) চা
উত্তরঃ (খ) সিগারেট।
১.৬ “যা পারি কেবল/সে-ই কবিতায় জাগে”— কবিতায় কী জাগে ?
(ক) কবির বিবেক (খ) কবির হিংসা
(গ) কবির ক্রোধ (ঘ) কবির অক্ষমতা
উত্তরঃ (ক) কবির বিবেক।
১.৭ “সূর্যের আলােয় তার রং কুসুমের মতাে নেই আর;”—কীসের রং ?
(ক) দেশােয়ালিদের জ্বালানাে আগুনের
(খ) তারার আলাের
(গ) মচকা ফুলের
(ঘ) হরিণের মাংস রাধবার আগুনের
উত্তরঃ (ক) দেশােয়ালিদের জ্বালানাে আগুনের।
১.৮ বাসিনীর মনিব বাড়ির বড় কর্তার বয়স হয়েছিল—
(ক) বিরাশি বছর (খ) আশি বছর
(গ) চুরাশি বছর (ঘ) তিরাশি বছর
উত্তরঃ (ক) বিরাশি বছর।
১.৯ নিখিল জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায় ?
(ক) বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে
(খ) সংসারধর্ম পালন করে
(গ) সামাজিক কাজকর্ম করে
(ঘ) অসুস্থ স্ত্রীর সেবাযত্ন করে।
উত্তরঃ (ক) বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে।
১.১০ একই পদ পাশাপাশি দুবার বসার প্রক্রিয়াকে বলে—
(ক) সমাস (খ) সন্ধি (গ) পদদ্বৈত
(ঘ) প্রত্যয়
উত্তরঃ (গ) পদদ্বৈত।
১.১১ ভারতীয় তথ্যচিত্রে প্রথম তথ্যচিত্রকার কে ?
(ক) মৃণাল সেন (খ) ঋত্বিক ঘটক
(গ) হীরালাল সেন (ঘ) প্রমথেশ বড়ুয়া
উত্তরঃ (গ) হীরালাল সেন।
১.১২ টপ্পা গান বাংলায় জনপ্রিয় করেছিলেন—
(ক) রামনিধি গুপ্ত (খ) বেগম আখতার
(গ) নির্মলেন্দু চৌধুরী (ঘ) ভূপেন হাজারিকা
উত্তরঃ (ক) রামনিধি গুপ্ত।
১.১৩ “আর্মাডা ডুবে গেলে কেঁদেছিলেন—
(ক) ফ্রেডারিক (খ) সিজারb(গ) ফিলিপ
(ঘ) আলেকজান্ডার
উত্তরঃ (গ) ফিলিপ।
অথবা,
“মর্দানা শুনেই ছুটে গেল।”—মর্দানা কোথায় ছুটে গেল?
(ক) গুরুনানকের কাছে
(খ) গড়িয়ে পড়া পাথরের দিকে
(গ) বলী কান্ধারীর কাছে
(ঘ) রেল লাইনের দিকে
উত্তরঃ (গ) বলী কান্ধারীর কাছে।
১.১৪ রজনীকান্তবাবুর মতে অভিনেতা স্টেজ থেকে নামলে—
(ক) সমাজশিক্ষক (খ) মস্ত বােকা
(গ) খুবই জ্ঞানী (ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়
উত্তরঃ (ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়।
অথবা,
‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শেষ দিকে রজনীকান্ত কোন্ ইংরেজি নাটকের সংলাপ উচ্চারণ করেছেন ?
(ক) ম্যাকবেথ
(খ) ওথেলাে
(গ) জুলিয়াস সিজার
(ঘ) মার্চেন্ট অফ ভেনিস
উত্তরঃ (খ) ওথেলাে।
১.১৫ “ধোয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে”—
(ক) নির্জন নিঃসঙ্গতার মতাে
(খ) উজ্জ্বল স্তব্ধতার মতাে
(গ) সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসের মতাে
(ঘ) শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে
উত্তরঃ (ঘ) শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে।
১.১৬ “চোখ তাে সবুজ চায় !/দেহ চায়”—
(ক) সবুজ পাতা (খ) সবুজ ঘাস
(গ) সবুজ বাগান (ঘ) সবুজ উঠান
উত্তরঃ (গ) সবুজ বাগান।
১.১৭ করিম ফরাজি একদা ছিল—
(ক) পেশাদার কুস্তিগির
(খ) পেশাদার লাঠিয়াল
(গ) পেশাদার বন্দুকবাজ
(ঘ) পেশাদার ডাকাত
উত্তরঃ (খ) পেশাদার লাঠিয়াল।
১.১৮ আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম কী দেখল ?
(ক) ফুটপাথে মৃত্যু (খ) অনাহারে মৃত্যু
(গ) বস্তিবাসীর মৃত্যু (ঘ) পাগলের মৃত্যু
উত্তরঃ (খ) অনাহারে মৃত্যু।
২. অনধিক ২০টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: ১x১২ =১২
২.১ খন্ডধ্বনির অপর নাম কী ?
উত্তরঃ খন্ড ধ্বনির অপর নাম বিভাজ্য ধ্বনি।
২.২ মুন্ডমাল শব্দ কাকে বলে ?
উত্তরঃ দুই বা তার বেশি শব্দের অদ্যাক্ষর নিয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে মুন্ডমাল শব্দ বলে।
২.৩ একভাষিক ও দ্বিভাষিক অভিধান কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে অভিধানে একটি ভাষার শব্দকে সেই ভাষাতেই ব্যাখ্যা করা হয় তাকে একভাষিক অভিধান বলে। আর, যে অভিযানে একটি ভাষার শব্দকে অন্য ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয় তাকে দ্বিভাষিক অভিধান বলে।
২.৪ “যখন সমুদ্র তাকে খেল”— সমুদ্র কী খেয়েছিল ?
উত্তরঃ সমুদ্র উপকথার আটলান্টিস নগরীকে খেয়েছিল।
অথবা,
“..মার সঙ্গে তর্ক শুরু করি।”— কোন বিষয় নিয়ে ?
উত্তরঃ প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, গুরু নানক গড়িয়ে পড়া একটি বিশালাকার পাথরের চাঙড় হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন। অলৌকিক গল্পে গল্পকথক এই বিষয়ে তার মায়ের সঙ্গে তর্ক শুরু করেছিল।
২.৫ “বিশ্বভারতী কি পারমিশন দেবে ?”— কীসের পারমিশন ?
উত্তরঃ বক্স অফিসের স্বার্থে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উদ্ভট প্রয়োগের পারমিশনের কথা বলা হয়েছে।
অথবা,
“খুব খারাপ হচ্ছে না, কী বলো ?”— কী খারাপ হচ্ছে না ?
উত্তরঃ রজনীকান্ত কালিনাথের সামনে ‘রিজিয়া’ নাটক থেকে বক্তিয়ারের সংলাপ বলেন। এখানে রজনীকান্তের সেই অভিনয়ের কথাই বলা হয়েছে।
২.৬ “এই পড়ে বুকে ভরসা এল”— কী পড়ে বুকে ভরসা এল ?
উত্তরঃ রুশদেশীয় বিখ্যাত চিত্রপরিচালক জাপানের কাবুকি আইজেনস্টাইন থিয়েটারের প্রশংসা করে অনেক কথা লিখেছিলেন। সেই লেখা পড়ে নাট্যকার শম্ভু মিত্রের বুকে ভরসা এল।
অথবা,
“সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলাম যে”— বক্তা কী বুঝেছিলেন ?
উত্তরঃ সেই রাত্রেই বক্তা অর্থাৎ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বুঝেছিলেন যে, যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’– তারা সব গাধা এবং তারা সব মিথ্যে কথা বলে।
২.৭ “বহুদিন জঙ্গলে যাইনি”— জঙ্গলে না যাওয়ার ফলে কী হয়েছে ?
উত্তরঃ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেছেন যে, তিনি বহুদিন জঙ্গলে যাননি এবং তার ফলে তিনি প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহুদিন শহরে রয়েছেন।
২.৮ “অলস সূর্য দেয় এঁকে”— অলস সূর্য কী এঁকে দেয় ?
উত্তরঃ অস্তাচলগামী অলস সূর্য সন্ধ্যার জলস্রোতে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়।
২.৯ “তেমনই একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনও”— তারাটিকে দেখে কবির কী কী মনে হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘শিকার’ কবিতায় ভোরের আকাশের তারাটিকে দেখে কবির মনে হয়েছে-
১) পাড়াগাঁয়ের কোনো বাসরঘরে সবথেকে গোধূলিমদির মেয়েটির মতো, কিংবা
২) মিশরের এক মানবী তার বুকের থেকে যে মুক্তা কবির নীল মদের গেলাসে রেখেছিল, সেই মুক্তার মতো।
২.১০ “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”— কঠিনকে ভালোবাসার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি সত্যকে ‘কঠিন’ বলেছেন এবং সেই কঠিনকে কবি ভালোবেসেছেন কারণ সে কখনও বঞ্চনা করে না।
২.১১ “বচসা বেড়ে গেল।”— বচসার কারণ কী ?
উত্তরঃ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’গল্পে একজন অজ্ঞাতপরিচয় বুড়ির ধর্মপরিচয় নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে বচসা শুরু হয়েছিল।
২.১২ “এলে পরে নদীর পাড়ে সারবন্দি ছরাদ হবে”— কাদের এভাবে শ্রাদ্ধ হবে ?
উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পে উচ্ছবের গ্রামের যেসব মানুষ আকস্মিক ঝড়-জলে অপঘাতে মারা গিয়েছিল, তাদের কথা বলা হয়েছে।
বিভাগ-ক (নম্বর: ৫০)
১. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
১.১ “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”—দুর্যোগটির বর্ণনা দাও। দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ? ৩+২
উত্তরঃ দুর্যোগের বর্ণনাঃ মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পে আমরা দেখি, দুর্যোগের দিন সন্ধ্যাবেলায় চন্নুনীর মা খেতে খেতে বলছিল যে, দেবতার গতিক ভালো নয়। তারপরে রাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল দুর্যোগে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝখানের খুঁটিটি ‘মাতাল আনন্দে টলছিল’ ধনুষ্টংকার রোগীর মতো। তাই ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা উচ্ছব মাটির দিকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং ভয়ে ভগবানের নাম নিচ্ছিল। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েদের জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপছিল। এসময় হঠাৎ বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে উচ্ছব দেখে, মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তোড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। নিমেষের মধ্যে সেই বানের জল উচ্চবের বউ ছেলেমেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাছে বেঁধে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় উচ্ছব
উচ্ছবের উপরে দুর্যোগের প্রভাবঃ দুর্যোগের আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উচ্ছবের বুদ্ধি লোপ পায়। বউ-ছেলেমেয়ে সহ সবকিছু ফিরে পাবার আশায় শুনসান বাড়ি ছেড়ে সে নড়ে না। লঙ্গরখানায় দেওয়া খিচুড়ি তাই তার খাওয়া হয় না। কয়েকদিন পর সরকার শুকনো চাল দিলে দীর্ঘদিন যাবৎ উপোসি উচ্ছব তা চিবিয়েই কয়েকদিন কাটায়। এ সময় মাঝে মাঝেই তার মনে পড়ে সেই দুর্যোগের রাতটার কথা। তার মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খেয়ে সে ভূত হয়ে যাচ্ছে, ভাত খেলেই সে পুনরায় মানুষ হবে এবং বউ-ছেলেমেয়ের দুঃখে কাঁদতে পারবে। তাই কয়েকদিন পেট পুরে ভাত খেতে সে কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
১.২ “বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রােদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।”বুড়ির চেহারা ও পােশাকের পরিচয় দাও। তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী? ২+৩
উত্তরঃ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ গল্পের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে একটি বুড়ি। ‘পউষে বাদলার’ অকাল-দুর্যোগের দিনে এক সকালে সেই বুড়ির আবির্ভাব ঘটেছিল। লেখক সুন্দরভাবে সেই বুড়ির চেহারা এবং পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। সে ছিল এক থুথুড়ে কুঁজো বুড়ি যাকে দেখে ভিখিরি বলেই মনে হবে। তার রাক্ষুসে চেহারায় একমাথা সাদা চুল এবং মুখে দীর্ঘায়ুর ছাপ পড়েছে। তার পরনে ছিল একটি ছেঁড়া নোংরা কাপড় এবং গায়ে জড়ানো ছিল একটি চিটচিটে তুলোর কম্বল। এক হাতে বেঁটে লাঠি নিয়ে পিচের উপর হেঁটে হেঁটে এসে হাজির হয়েছিল চায়ের দোকানের সামনে।
এই বুড়ি ছিল বৃক্ষবাসিনী। বাজারের একটি বটগাছের খোন্দলে সে আশ্রয় নিয়েছিল। সময়টা ছিল শীতকাল, তার উপর একটানা কদিন ধরে বৃষ্টি পড়ছিল। সবাই ভেবেছিল এখানে থাকলে বুড়ি নির্ঘাত মারা যাবে। পরদিন সকালেই বাজারের লোকজন আবিষ্কার করল যে বুড়ি আর নড়ছে না, নিঃসাড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে সকলেই ধরে নিল বুড়ি মারা গেছে।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবরটা থানায় দিয়ে এলেই ভালো হতো। কিন্তু চৌকিদারের পরামর্শে পাঁচ কোশ দূরে থানায় খবর না দিয়ে বুড়িকে ‘লদীতে’ ফেলে দিয়ে আসা হয়। কয়েকজন মিলে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে বুড়িকে নদীর চড়ায় ফেলে এসেছিল। সেইজন্য উজ্জ্বল রোদে ‘তপ্ত বালিতে’ চিত হয়ে সে পড়েছিল।
২. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
২.১ “রূপ-নারানের কূলে জেগে উঠিলাম,”— কে জেগে উঠলেন ? জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা বুঝিয়ে দাও। ১+৪
উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত আলোচ্য লাইনটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের রূপনারানের কূলে কবিতার একটি অংশ। এই লাইনটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে রূপনারানের তীরে জেগে উঠেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে যে গভীর জীবন উপলব্ধি অর্জন করেছিলেন তা হল জীবন কোন স্বপ্ন নয় তা অত্যন্ত বাস্তব ও কঠিন। আর প্রতিটি জীবনের সত্য কঠিন গুলি অনিবার্যভাবে জীবনে নেমে আসে আর তাকে আমাদের উদাহর ভাবে আমন্ত্রণ জানানো উচিত বলে তিনি মনে করেছেন।
কবিতাটিতে তিনি যে রূপনারায়ণ নদীর কথা বলেছেন তা বিশেষ অর্থে কোন নদী নয় তা রূপময়ী জগতকে বুঝিয়েছেন। তিনি জীবনের প্রকৃত সত্য হিসাবে উপলব্ধি করেছেন যে স্বপ্ন নয় বরং আঘাত আর বেদনার মধ্য দিয়েই জীবনকে প্রকৃতরূপে চেনা যায়। যেমন কবি নিজে বিভিন্ন সংঘাত আর কঠিনকে অবলম্বন করে নিজের জীবনকে চিনেছেন।
জীবন সায়ান্নে কবি আরো উপলব্ধি করেছেন যে আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা হল জীবন। আর দুঃখের তপস্যার মধ্য দিয়ে জীবনের সমস্ত চরম মূল্যকে আমাদের মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে হয়। এই কারণে তিনি রূপনারানের নদী থেকে জেগে উঠেছেন বাস্তবের মাটিতে, যেখানে তিনি জানেন মৃত্যু অনিবার্য তবুও সেই কঠিন সত্যকে তিনি মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছেন।
২.২ “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল, নামুক মহুয়ার গন্ধ।”—’আমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? এমন কামনার কারণ কী ?
উত্তরঃ কবি সমর সেনের লেখা ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় উদ্ধৃত পংক্তিটিতে ‘আমার’ বলতে কবি স্বয়ং, নিজেকেই বুঝিয়েছেন।
এমণ কামনার কারণ—
ক্লান্তি থেকে মুক্তিঃ কবি সমর সেন হলেন নাগরিক কবি। আলোচ্য কবিতার শুরুতেও নগর জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। তাই নাগরিক জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য তিনি মহুয়ার দেশে’র কথা ভেবেছেন। প্রকৃতির সেই বাধাহীন বিস্তারে, মেঘমদিরতায় কবি ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে’ নগরজীবনের দূষণ ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’কে ভুলে থাকতে চেয়েছেন।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতাঃ কবি একঘেয়েমি জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেতে চান। দিগন্ত-বিস্তৃত প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে কবি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে চান। মহুয়ার দেশে পথের দুধারে ছায়া ফেলা দেবদারু গাছের রহস্যময়তা বা দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসরূপী গর্জন কবিকে আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির এই নির্মলতাকে আশ্রয় করেই কবি নাগরিক অবসন্নতা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছেন। তাই হৃদয়ের গভীরতম আকাঙ্ক্ষায় তিনি উচ্চারণ করেন– “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া ফুল / নামুক মহুয়ার গন্ধ।”
কলুষতা থেকে মুক্তিঃ নগর হল যন্ত্রসভ্যতার প্রতীক। সেখানে কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো ঘুরে ফিরে ঘরে আসে’। এই কলুষতা থেকে মুক্তি পেতেই কবি মহুয়া ফুলের স্পর্শ আর মহুয়ার ঘ্রাণ পেতে চেয়েছেন।
৩. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
৩.১ “তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন।”– আইজেনস্টাইন সাহেব কে ? তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন ? সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন ?
উত্তরঃ আইজেনস্টাইন সাহেবের পরিচয়ঃ নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে উল্লিখিত আইজেনস্টাইন সাহেব হলেন প্রখ্যাত এক রাশিয়ান চিত্রপরিচালক। উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গঃ তিনি জাপানের নৃত্যনির্ভর, ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটারের অভিনেতাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন জাপানের কাবুকি থিয়েটার দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব লিখেছিলেন যে কাবুকি থিয়েটারের অভিনয়েও ‘ভঙ্গির বহুল ব্যবহার আছে’। উদাহরণ হিসেবে তিনি কিছু দৃশ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। যেমন–
একজন নাইট ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ধীরপায়ে গম্ভীর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং তার পিছনে দুজন শিফটার একটি প্রকান্ড দুর্গদ্বার তুলে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরেই দুর্গদ্বারের আকার ক্রমশ কমতে থাকে। এভাবেই বোঝানো হয় যে নাইট দুর্গদ্বার থেকে বহুদূরে চলে গেছেন। আবার, মঞ্চে দুজন শিফটারর উপস্থিতিটাও যেন স্বাভাবিক ব্যাপার।
অপর একটি দৃশ্যে যুদ্ধের বর্ণনা আছে। দুই যােদ্ধা খাপ থেকে কাল্পনিক তলােয়ার বের করলেন এবং কাল্পনিক যুদ্ধ করতে লাগলেন। একজন অন্যজনের কাল্পনিক খোঁচা খেয়ে লুটিয়ে পড়লেন। মরার আগে একবার তাঁর হাতটা নড়ে উঠল, তারপর একটা পা তিরতির করে কাঁপল, চোখটা দুবার ঘুরল, মাথাটা দুবার নড়ল। শেষে তার জিভ বেরিয়ে গেল। তারপর স্টেজে তাঁর সদ্যবিধবা স্ত্রী ঢুকে যখন প্রবল কান্নাকাটি শুরু করল, তখন সেই মৃত লােকটা উঠে আস্তে করে চলে গেল। কারণ, তখন দর্শকদের কাছে মহিলার শােকপ্রকাশটাই কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য, তার মৃত স্বামীর উপস্থিতি নয়।
৩.২ ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটক হিসেবে কতখানি সার্থক আলােচনা করাে।
উত্তরঃ একাঙ্ক নাটক হিসেবে সার্থকতা মাত্র একটি অঙ্ক বা সর্গ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত, দ্রুতসংঘটিত নাটকই হল একাঙ্ক নাটক। এটি এমন এক ধরনের নাটক যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল একমুখিতা। অবশ্য আদর্শ নাটকের সমস্ত লক্ষণ একাঙ্ক নাটকেও উপস্থিত থাকে।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি হল প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ফেলে আসা অভিনয়জীবনের স্মৃতিরােমন্থন। মঞ্চে দেখা যায়, দিলদারের পােশাক পরে মধ্যরাতের শূন্য প্রেক্ষাগৃহে এই মানুষটি নেশার ঘােরে রয়েছেন। আসলে তিনি রয়েছেন স্মৃতির ঘােরে। পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয়জীবনের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে এসেছেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ এই সু- অভিনেতা। অভিনয়ের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা এই মানুষটি হতাশাদীর্ণ হয়ে বলেছেন, “অভিনেতা মানে একটা চাকর, একটা জোকার, একটা ক্লাউন।” তাঁর মনে হয়েছে, “যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’—তারা সব গাধা- গাধা।” কিন্তু জীবনসায়াহ্নে উপনীত অভিনেতা সেই অভিনয়ের মধ্যেই আত্মতৃপ্তি এবং গর্বের উপাদান খোঁজেন। অতীতকে সম্বল করে, মঞ্চের রঙিন দিনগুলিকে আঁকড়ে ধরে এই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ অনুভব করেন, “স্মৃতি সততই সুখের।”
সুতরাং, এক এবং অভিন্ন বিষয় নিয়েই এই নাটকটি রচিত হয়েছে। আর নাটকের প্রাণ হল দ্বন্দ্ব, সেই নাট্যদ্বন্দ্বও এই নাটকটিতে উপস্থিত রয়েছে। অভিনেতা রজনীকান্তের অন্তর্দ্বন্দ্ব নাটকটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ‘ঘটনার ঘনঘটা’ এখানে অনুপস্থিত। মাত্র দুটি চরিত্রের (কালীনাথ ও রজনীকান্ত) সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। রজনীকান্ত চরিত্রটির দীর্ঘ সংলাপ মাঝেমধ্যেই নাটকটির গতি রুদ্ধ করে দিলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠক বা দর্শক টানটান অবস্থায় উপভােগ করতে পারেন। এর নাট্যরস। সুতরাং, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’-কে আমরা শিল্পসার্থক একাঙ্ক নাটক বলতেই পারি।
৪. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
৪.১ “বইয়ে লেখে রাজার নাম। / রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত ?”—কারা, কেন পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল ?
উত্তরঃ শঙ্খ ঘােষ অনূদিত বের্টোল্ট ব্রেখটের কবিতা ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ থেকে প্রশ্নােদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। প্রাচীন মিশরের নগররাষ্ট্র থিবসের নির্মাণকারীর নাম উল্লেখ করতে গিয়ে কবি এই উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন। থিবস্ নগররাষ্ট্র গড়ে তােলার জন্য সে রাজ্যের মজুরদেরই পাথর ঘাড়ে করে আনতে হয়েছিল।
কথামুখঃ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা যে সবচেয়ে বেশি—সেই সত্য প্রতিষ্ঠা করতেই ব্রেখট কবিতাটি লিখেছেন।
উপেক্ষিত শ্রমজীবী মানুষঃ প্রচলিত ইতিহাসে রাজারাজড়া এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের যাবতীয় কীর্তি এবং বিজয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজের বিত্তবান শ্রেণি এবং উঁচুতলার মানুষরাই সেই ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করেন। অথচ তার আড়ালে থাকা শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা চিরকাল উপেক্ষিতই থেকে যায়।
কবির কথাঃ কবি এই কবিতায় জানিয়েছেন, শ্রমিক শ্রেণিই হল ইতিহাসের প্রকৃত কারিগর। প্রাচীন মিশরে সাত-তােরণবিশিষ্ট একটি নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন গ্রিসের ‘থেবাই’ শহরের অনুকরণে তার নামকরণ হয়েছিল ‘থিবস’। এর গড়ে- ওঠা সম্ভব হয়েছিল শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই। আক্ষরিক অর্থেই, থিবস নগরী নির্মাণ করেছিলেন সে যুগের শ্রমিকরা, কখনােই রাজা নন। শুধু তাই নয়, ব্যাবিলনের পুনর্নির্মাণ, লিমা নগরী নির্মাণ, চিনের প্রাচীর নির্মাণ কিংবা জয়তােরণে উজ্জ্বল রােম নগরীকে গড়ে তােলা—সবই সম্ভব হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে। রাজাদের কখনােই এগুলির নির্মাতা বলা চলে না।
৪.২ “চোখের জলটা তাদের জন্য।”– বক্তা কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন ? যে ঘটনায় বক্তার চোখে জল এসেছিল সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখাে।
উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিজনঃ কর্তার সিং দুগগালের ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটির বক্তা হলেন গল্পকথক। পাঞ্জাসাহেবের মানুষ, যারা কোনাে কিছু পরােয়া না করে, জীবন তুচ্ছ করে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে খিদে তেষ্টায় কাতর বন্দি দেশবাসীকে খাদ্য ও জল পৌঁছে দিয়েছিলেন, কথক তাদের উদ্দেশ্যেই তার চোখের জল উৎসর্গ করেছেন।
বক্তার চোখে জল আসার ঘটনাঃ কোনাে-এক শহরের নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলিবর্ষণ করার পর ফিরিঙ্গি সৈনিকরা জীবিতদের ট্রেনে করে অন্য শহরের জেলে নিয়ে যাচ্ছিল। নিরীহ কয়েদিরা খিদে-তেষ্টায় কাতর হলেও পথের মধ্যে কোথাও ট্রেন থামানাের নির্দেশ ছিল না। পাঞ্জাসাহেবের মানুষ এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। যে শহরে গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন, সেখান দিয়ে ক্ষুধার্ত-তৃয়ার্ত ভারতীয় বন্দিদের নিয়ে ট্রেন চলে যাবে—এটা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন জানানাে হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ টেলিফোন, টেলিগ্রাফ পেয়েও সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তখন পাঞ্জাসাহেবের মানুষ স্টেশন-প্ল্যাটফর্মে রুটি, লুচি, ডাল, পায়েস প্রভৃতি খাবার মজুত করেন। তারপর ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর হয়ে স্ত্রী-সন্তান-সহ পুরুষ মানুষরা রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তীক্ষ্ম হুইসেল দিয়ে ট্রেন এসে গতি কমালেও তার চাকা চলে যায় অনেকের বুকের ওপর দিয়ে। ট্রেন পিছােতে গেলে মৃতদেহগুলাে কেটে, দুমড়ে মুচড়ে যায়। খালপাড়ের সেতুর দিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। এভাবেই ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাবার ও জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য অজস্র প্রাণের বিনিময়ে চলন্ত ট্রেন থামিয়েছিলেন পাঞ্জাসাহেববাসী। এই ঘটনাই বক্তার চোখে জল এনেছিল।
৫. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
৫.১ “হঠাৎ একদিন ক্ষেপে উঠল কলের কলকাতা।”— কলকাতার ‘ক্ষেপে ওঠা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ? কলকাতার ক্ষেপে ওঠার ফল কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘কলের কলকাতা’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে লেখক ‘ক্ষেপে ওঠা’ কলকাতার পরিচয় দিয়েছেন।
ব্রিটিশ ভারতে কলকাতা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাণকেন্দ্র। পরাধীনতার বন্ধন মোচন করার জন্য সাধারণ মানুষও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। মিটিং, মিছিল, বিদেশি দ্ৰব্য বিসর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সেই সময় পাড়ায় পাড়ায় মিটিং এবং মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য “জনসমুদ্রে জোয়ার” লেগেছিল। কলকাতার ‘ক্ষেপে ওঠা’ বলতে লেখক এই গণ অভ্যুত্থানকেই ইঙ্গিত করেছেন।
কলকাতার ক্ষেপে ওঠার ফলে কলকাতাবাসীর জীবনযাত্রায় অনেক প্রভাব পড়েছিল। একইসঙ্গে, ক্ষেপে ওঠা কলকাতা লেখকের জীবনেও অনেক প্রভাব ফেলেছিল। সেগুলি হল যথাক্রমে—
প্ৰথমতঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের জোয়ারে উত্তাল কলকাতার জনজীবনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ লোপ পেয়ে গিয়েছিল। সকলের তখন একটাই লক্ষ- ভারতের স্বাধীনতা। এইজন্য লেখককেও তখন আর ‘বাঙাল’ বলে কেউ খ্যাপানো হত না।
দ্বিতীয়তঃ সকলের মধ্যে বিদেশি দ্ৰব্য বর্জন এবং স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
তৃতীয়তঃ কিশোর লেখক পুলিশের তাড়া খেতে খেতে একদিন কলকাতার রাস্তাঘাট চিনে ফেলেছিলেন।
৫.২ “তাতে চেংমানের চোখ কপালে উঠল।” চেংমান কে ? তার চোখ কপালে ওঠার কারণ কী ? ১+৪
উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ছাতির বদলে হাতি’ (‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ) নিবন্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল চেংমান নামক গারো চাষি, যে ধূর্ত মহাজনের কৌশল না বুঝতে পেরে সর্বহারা হয়েছিল।
ছাতি কীভাবে পেয়েছিল— হালুয়াঘাট বন্দরের মনমোহন মহাজনের বন্ধকি- তেজারতির ফাঁদে পড়েই সর্বস্বান্ত হয়েছিল গারো চাষি চেংমান। হালুয়াঘাট বন্দরে সওদা করতে এসে মুশলধারে বৃষ্টিতে আটকে গিয়েছিল চেংমান। তখন সে মহাজনের দোকানের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নেয়। চেংমানের দুরবস্থা দেখে করুণার অবতার হয়ে মনমোহন খাস কলকাতা থেকে আনা আনকোরা নতুন একটা ছাতা তাকে দিয়ে দেয়। এই ঘটনায় চেংমান হতবাক হলেও, মনমোহন তাকে ভরসা দিয়ে বলে সুবিধামতো পয়সা দিলেই হবে। সরলহৃদয় চেংমান মহাজনের কৌশল না বুঝে বাড়ি চলে যায়।
পরিণতি—বারবার পাওনা মেটাতে গেলে মহাজন আমল দেয় না দেখে ক্রমে চেংমান ভুলে যায় সেই ধারের কথা। কয়েক বছর পর মনমোহন তাকে ধরে ধার মেটাতে চাইলে হিসাব দেখে চেংমান অবাক হয়ে যায়। কারণ সামান্য ছাতার বদলে মহাজন দাবি করে হাজারখানেক টাকা। চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান। এই ঘটনায় সামান্য গারো চাষি চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মহাজন তাঁর কাছ থেকে ছত্রিশ বিঘে জমি ছাতার বদলে দখল করেছিল।
৬. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x১=৫
৬.১ রূপমূল কাকে বলে ? উদাহরণ-সহ স্বাধীন ও পরাধীন রূপমূলের পরিচয় দাও। ১+২+২
উত্তরঃ ভাষায় ব্যবহৃত এক বা একাধিক ধ্বনি দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছকেই বলা হয় রূপমূল।
রূপমূল দু-প্রকারের一
ক) স্বাধীন রূপমূল বা মুক্ত রূপমূল এবং
খ) পরাধীন রূপমূল বা বদ্ধ রূপমূল।
ক) স্বাধীন রূপমূলঃ যে অর্থপূর্ণ, ক্ষুদ্রতম ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি অন্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির সহযােগ ছাড়াই স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে বলে মুক্ত বা স্বাধীন রূপমূল।
খ) পরাধীন রূপমূলঃ যে অর্থপূর্ণ, ক্ষুদ্রতম ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি সর্বদা অন্য ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, কখনও স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না, তাকে বলে বন্ধ বা পরাধীন রূপ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়— ‘ছেলেটি’ শব্দটিতে দুটি রূপমূল রয়েছে- ‘ছেলে’ এবং ‘টি’। ‘ছেলে’ শব্দটি হল স্বাধীন রূপমূল এবং ‘টি’ হল পরাধীন রূপমূল। কারণ, ‘ছেলে’ রূপমূলটি ভাষায় নানাভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং সর্বদাই এককভাবে ব্যবহৃত হতে পারবে। যেমন— ‘রামবাবুর ছেলে বিদেশে থাকে’, ‘তার ছেলে ডাক্তার’ ইত্যাদি। কিন্তু ‘টি’ রূপমূলটি যখনই ভাষায় প্রয়োগ করা হোক সর্বদাই একটি স্বাধীন রূপমূলকে (যেমন, এখানে ‘ছেলে’-কে) অবলম্বন করে বাক্যে ব্যবহৃত হবে।
৬.২ শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা ক-টি ভাগে বিভক্ত ও কী কী ? যে-কোনাে একটি ভাগ উদাহরণ-সহ বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তরঃ ভাষা প্রবাহিত নদীরই মতো। নদী যেমন তার গতিপথ প্রায়ই পরিবর্তন করে, ভাষারও তেমনই রূপের পরিবর্তন ঘটে, অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার মতো জীবন্ত ভাষায় শব্দার্থের এরূপ পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক। ফলে এই ভাষার বেশকিছু শব্দ তাদের মূল অর্থটিকে প্রসারিত করে, কখনও সংকুচিত করে, কখনও মূল অর্থটির উন্নতি ঘটে, আবার অবনতি ঘটে, এমনকি সম্পূর্ণ নূতন অর্থে প্রযুক্ত হয়।
শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা গুলিকে ভাষাবিজ্ঞানীরা পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন— (১) অর্থের বিস্তার (২) অর্থসংকোচ (৩) অর্থসংক্রম (৪) অর্থের উন্নতি (৫) অর্থের অবনতি।
(১) অর্থ বিস্তার বা সম্প্রসারণঃ কোন শব্দ যখন কোন ব্যক্তি বা বস্তুর বিশেষ ধর্ম বা গুণকে অতিক্রম করে, বহু বস্তুর সাধারণ ধর্ম ও গুণের পরিচায়ক হয়ে ওঠে, তখন শব্দের অর্থের বিস্তার ঘটে।
যেমন— ‘ধন্য’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘ধনশালী ব্যক্তি’। কিন্তু এখন অর্থ বিস্তারের ফলে ‘ধন্য’ বলতে ‘সার্বিক সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে’ বোঝায়। ‘বর্ষ’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘বর্ষাকাল’, এখন সম্প্রসারিত অর্থ হয়েছে ‘বৎসর বা সারা বছর’। ‘তৈল’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘তেলের নির্যাস’, এখন সম্প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন দানাশস্য থেকে উৎপন্ন তরল নারিকেল থেকে উৎপন্ন তরল এবং খনিজ কিছু কিছু তরলকে বলা হয়। ‘বেনারসি’ শব্দের অর্থ ছিল বেনারসে উৎপন্ন যেকোনো জিনিস, বিশেষভাবে শাড়ি। এখন অর্থ হয়েছে বেনারস ছাড়া অন্যত্র উৎপন্ন অনুরূপ শাড়ি।
৭. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫x২=১০
৭.১ বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলােচনা করাে।
উত্তরঃ বাংলা সঙ্গীতের ধারায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯- ১৯৭৬) নিজেই যেন একটা অধ্যায়। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সর্বোপরি একজন সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি এবং এগুলি বাঙালি সংস্কৃতির অতুলনীয় সম্পদবিশেষ।
গীতিকার হিসেবে নজরুলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯২৮ সালে, গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির গীতিকার হিসাবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে নজরুলের শিল্পী জীবনের সূত্রপাত হয় ছোটবেলাতেই। লেটোর দলে কাজ করার সময়ই তাঁর গান রচনার সূচনা হয়েছিল। এই ভ্রাম্যমাণ যাত্রাদলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে নজরুল বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং একইসঙ্গে হিন্দু পুরাণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। আবার, সৈনিক হিসেবে মিলিটারি ব্যান্ডের মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও ফারসি কবিতার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর বিচিত্র জীবন-অভিজ্ঞতা গীতিকার নজরুলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল।
সংগীত জগতে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভার স্রষ্ঠা। গীতিকাব্য ও সুরকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা ছিল আকাশস্পর্শী। তার লেখা কাব্যের ও গানে আরবি-ফারসি সহ ভারতীয় ও বাঙালি সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটায় বাংলা গানের ক্ষেত্রে আসে অভূতপূর্ব বৈচিত্র, নব নব আস্বাদন।
নজরুলের গানকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা—
প্রেম ও প্রকৃতিঃ নজরুলের অধিকাংশ গানের বিষয় ভাবনা প্রেম ও প্রকৃতি প্রধান। তাঁর প্রেম সঙ্গীতগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- “মোর প্রিয়া হবে এসো রানী”।
স্বদেশ সংগীতঃ নজরুলের লেখা স্বদেশী সংগীতগুলি তার কবিতার মতো শাসক ইংরেজদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। তার “কারার ঐ লৌহ কপাট” অথবা “দুর্গম গিরি কান্তার-মরু” গানগুলি ছিল সে সময়ে বিপ্লবীদের জীবনসঙ্গী।
ঋতু সংগীতঃ নজরুলের বহু গানেই ঋতুর প্রসঙ্গে এসেছে। তাঁর লেখা ঋতু সংগীত গুলির মধ্যে “এসো শরদ প্রাতের পথিক” বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
গজলঃ মধ্যপ্রাচ্যে গজল অনুসারে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহারে তৈরি নজরুলের লেখা বাংলা গজলগুলি রসসিদ্ধ হয়েছিল। যেমন- “গুলবাগিচার বুলবুলি আমি”।
হাস্যগীতিঃ কাজী নজরুল ইসলাম বেশকিছু হাসির গানও লিখেছেন। “আমার হরিনামের রুচি কারন পরিণামের লুচি” গানটি প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও তিনি আরও গান লিখেছেন। যেমন- ভক্তিগীতি (খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে) ইসলামিক (ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ) শিশু সংগীত (প্রজাপতি প্রজাপতি) ভাটিয়ালি (একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে, এইতো নদীর খেলা) ইত্যাদি। বাংলা গানের যাত্রাপথের নজরুল ইসলাম নামটি তাই অবিস্মরনীয়।
৭.২ বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলােচনা করাে।
উত্তরঃ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান—
বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্ময়কর প্রতিভা ঋত্বিক ঘটক (৪.১১.১৯২৫- ৬.২.১৯৭৬)। ঢাকায় জন্ম নেওয়া ঋত্বিক ঘটকের কৈশাের ও প্রথম যৌবনে পদ্মাপারে কাটানাের অভিজ্ঞতা তার চলচ্চিত্র নির্মাণের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। বিমল রায়ের সহযােগী হিসেবে চলচ্চিত্র সৃষ্টিতে তাঁর হাতে খড়ি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া নাগরিক’ ছবিটি আর্থিক কারণে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পাওয়া সুবােধ ঘােষের গল্প অবলম্বনে অযান্ত্রিক’ সিনেমায় যন্ত্রের সাথে মানুষের সম্পর্ককে যেভাবে বিষয় হিসেবে ঋত্বিক তুলে ধরেন তা অভিনব। সফল চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর পরিচালিত ছবির তালিকা—’নাগরিক’ (১৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৭), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ (১৯৭৪)।
সংখ্যায় খুবই অল্প তার পরিচালিত ছবির তালিকা, কিন্তু প্রতিটি ছবিই শিল্পনিষ্ঠ এবং নতুনত্বের সন্ধানী। মেঘে ঢাকা তারা’তে ভাঙনের মুখে দাঁড়ানাে এক উদ্বাস্তু পরিবারের বড়াে বনের আত্মদান সমাজবাস্তবতার এক অসামান্য দলিল। অবিভক্ত বাংলার স্মৃতি, দেশবিভাগের যন্ত্রণা, পূর্ববঙ্গের জন্য নস্টালজিয়া উঠে আসে তার ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’-তেও। ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছেন- “ঋত্বিক মনেপ্রাণে বাঙালি পরিচালক, বাঙালি শিল্পী, আমার থেকেও অনেক বেশি বাঙালি। আমার কাছে সেইটেই তার সবচেয়ে বড়াে পরিচয়।”
৭.৩ ‘পট’ শব্দটির অর্থ কী ? এই শিল্পটি সম্পর্কে আলােচনা করাে। ১+৪
উত্তরঃ ‘পট’ কথাটির আভিধানিক অর্থ হল চিত্র।
লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন ধারা হল পট। কাপড়ের উপর কাদামাটি কিম্বা গোবরের প্রলেপ দিয়ে জমিন তৈরি করে পট আঁকা হত। ওই পট নিয়ে শিল্পী গান গাইতেন। সপ্তম শতকেও পটের চল ছিল বলে জানা যায়। সেই সময় পটের বিষয় ছিল বুদ্ধদেবের জীবনী। ত্রয়োদশ শতকে পটশিল্প বিস্তার লাভ করেছিল। আরও পরে পনেরো শতকে গাজীর পট জনপ্ৰিয় হয়েছিল। ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের জন্যও পটের ব্যবহার হত। উনিশ শতকে কালীঘাট পট বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলী মিশিয়ে কালীঘাট পট তৈরি হত। ‘মোহন্ত ও এলোকেশী’ এই পটের উদাহরণ।
যারা পট তৈরি করতেন তাদের বলা হত পটুয়া। কয়েকটি প্যানেলে ক্যানভাসকে ব্যবহার করে পটুয়ারা কোনো কাহিনীকে ফুটিয়ে তুলতেন। সাধারণত পৌরাণিক কাহিনী বা লোকগাথা পটের মাধ্যমে তুলে ধরা হত। পটের কাহিনীকে গায়েনরা গান গেয়ে প্ৰকাশ করতেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে এটি মানুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যম ছিল। তবে রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি সত্যপীর বা গাজীর পট ও মানুষের প্রিয় ছিল।
রাজস্থানেও পটশিল্পের প্রচলন ছিল। তবে বিষয়বৈচিত্র্যে তা বাংলার পটের সমতুল্য ছিল না। এক আনা মুল্যের বিনিময়ে একটি পট কেনার জন্য মানুষ ভিড় জমাত বলে জানা যায়। এমনকি বাংলার এই পট প্যারিসে পসার জমিয়েছিল। আর সেখানে এর খদ্দের ছিলেন পিকাসো। পিকাসোর চিত্রশৈলীতে কালীঘাটের প্রভাব আছে বলে অনেকে মনে করেন। যাইহোক, উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলায় এই পটশিল্পের রমরমা ছিল। এগুলি শুধু উৎকৃষ্ট শিল্পসামগ্রী নয়, সমকালীন সমাজের মুল্যবান দলিল হিসেবেও বাংলার পটের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
৭.৪ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান আলােচনা করাে।
উত্তরঃ বিজ্ঞানচর্চায় বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান—
ডঃ বিধানচন্দ্র রায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে সূর্যের মতো উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব (১৮৮২-১৯৬২)। তবে শুধু চিকিৎসাবিদ্যা নয়, তিনি বাংলার বুকে বিজ্ঞান চর্চার গৌরবময় সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করার যে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তার মূল্য অপরিসীম।
বিধানচন্দ্র কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে এল. এম. এস ও এম.বি পাস করেন এবং ১৯০৮ সালে এম. ডি ডিগ্রী লাভ করে বিলেত যান। সেখান থেকে মাত্র দু’বছরে এম. আর. সি. পি এবং এফ. আর. সি. এস পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন।
১৯১১ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার দায়িত্ব নেন। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে ১৯১৮ সালে রায় ফারমাইকেল মেডিকেল কলেজে মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথকে পরাজিত করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি “রয়্যাল সোসাইটি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিন” এবং “আমেরিকান সোসাইটি অফ চেস্ট ফিজিশিয়ান” এর ফেলো নির্বাচিত হন।
শিক্ষাকে ঔপনিবেশিক শাসন মুক্ত করার জন্য তিনি সংগ্রাম শুরু করেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি বিল পাস করান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ে আসেন অভূতপূর্ব বিপ্লব। কলকাতা পুরসভার মেয়র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও চিকিৎসক ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে তিনি অনলস ছিলেন।
বিজ্ঞান চর্চা প্রসার ও বাংলার উন্নয়ন করার জন্য তার প্রস্তাব অনুযায়ী খড়গপুর আই. আই. টি এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গড়ে ওঠে। তিনি শিলং hydro-electric কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। জাহাজ, বিমান ও ইনসিওরেন্স ব্যবসার সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
চিকিৎসা, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও দেশ সেবায় অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী বিধানচন্দ্র ১৯৬১ সালে “ভারতরত্ন” সম্মানে ভূষিত হন এবং ১৯৬২ সালের ১ লা জুলাই নিজের জন্মদিনের দিনেই মৃত্যুবরণ করেন। এই দিনটি “চিকিৎসক দিবস” হিসাবে পালিত হয়।
৮. নিম্নলিখিত যে-কোনাে একটি বিষয় নির্বাচন করে নির্দেশ অনুসারে কমবেশি ৪০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধচনা করাে : ১০
৮.১ নিম্নে প্রদত্ত মানস-মানচিত্র অবলম্বনে একটি প্রবন্ধচনা করাে :
ভারতের দেশপ্রেমের ঐতিহ্য
• দেশ কেবল নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নয়
• দেশপ্রেম ও বর্তমান ভারতবাসী
• বৈচিত্র্যে ঐক্য।
• স্বাধীনতা আন্দোলন ও দেশপ্রেম
• বিশ্বমৈত্রী ও দেশপ্রেম
৮.২ প্রদত্ত অনুচ্ছেদটিকে প্রস্তাবনা বা ভূমিকাস্বরূপ গ্রহণ করে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে, পরিণতিদানের মাধ্যমে একটি
পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করাে:
বাংলা বইয়ের দুঃখ
বিলাতে অন্তত সামাজিকতার দিক থেকেও লােক বই কেনে। কিন্তু আমাদের দেশে সে বালাই নেই। ও দেশে বাড়িতে গ্রন্থাগার
রাখা একটা আভিজাত্যের পরিচয়। শিক্ষিত সকলেরই বই কেনার অভ্যাস আছে। না কিনলে নিন্দে হয়—হয়তাে বা কর্তব্যেরও
ত্রুটি ঘটে। আর অবস্থাপন্ন লােকেদের তাে কথাই নেই। তাদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে এক একটা বড়াে গ্রন্থাগার আছে। কিন্তু
দুর্ভাগা জাত আমরা। আমাদের শিক্ষিতদের মধ্যেও পুস্তকের প্রচলন নেই।
৮.৩ প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্ৰম বিন্যাস করে প্রবন্ধচনা করাে।
বিতর্কের বিষয়: ‘বিজ্ঞাপনী প্রচার মানুষকে বােকা বানানাের কৌশল
মতের পক্ষে : নিজের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নির্বাচনের সুযােগ দেয় বিজ্ঞাপন। কিন্তু এখানেই থেকে যায় প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা। বিজ্ঞাপনের জৌলুসে বিভ্রান্ত হয়ে যখন নিম্ন মানের দ্রব্য ক্রয় করা হয় তারপর আক্ষেপ ছাড়া কিছুই করার থাকে না, মানুষ নিজের সামর্থ্যের কথা ভুলে গিয়ে বিজ্ঞাপনের প্রলােভনে পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে
আনে। কখনাে-কখনাে রুচিহীন বিজ্ঞাপন বিশেষভাবে অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। মুনাফা লাভের জন্য
পণ্য প্রস্তুতকারক বা বিক্রেতা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য পরিবেশন করেন বিজ্ঞাপনে। পরিণত শিক্ষিত মানুষও এর ফলে অনেক সময় বিভ্রান্ত বােধ করেন। তাই বিজ্ঞাপনী প্রচার নয় পণ্যদ্রব্যের গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা আবশ্যক।
৮.৪ প্রদত্ত সূত্র ও তথ্য অবলম্বনে একটি প্রবন্ধরচনা করাে:
মহাশ্বেতা দেবী
জন্ম: ১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬, ঢাকায়।
পিতা: মণীশ ঘটক (যুবনাশ্ব)।
শিক্ষা: রাজশাহির স্কুলে, শান্তিনিকেতনে (১৯৩৬-৩৮), রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য লাভ, ম্যাট্রিক পাশ (১৯৪২) পরে
এমএ (ইংরেজি)।
কর্মজীবন: পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা, পােস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফে আপার ডিভিশন ক্লার্ক। রমেশ মিত্র বালিকা
বিদ্যালয়ে এবং জ্যোতিষ রায় কলেজে শিক্ষকতা।
সাহিত্য কীর্তি : ‘ঝাঁসীর রাণী’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘স্তন্যদায়িনী’ ও অন্যান্য গল্প।
পুরস্কার: ম্যাগসাইসাই, সাহিত্য আকাদেমি, জ্ঞানপীঠ, দেশিকোত্তম, পদ্মশ্রী ইত্যাদি।
মৃত্যু : ২৮ জুলাই, ২০১৬, কলকাতা।
TAGS: গত 10 বছরের hs প্রশ্নপত্র পশ্চিমবঙ্গ, HS Previous Years Question in bengali, 2015 সালের hs প্রশ্নপত্র, hs Last 5 Year Question, hs WBCHSE Question Paper,West Bengal Class 12 Previous Year Question,H.S. Question Papers,wbchse last 5 years question paper pdf class 12 with answers,,wbchse last 10 years question paper pdf with answers,wbchse previous year question paper pdf download,last 10 years question paper of wbchse,last 5 years hs question paper west bengal board,last 10 years hs question papers pdf download,wbchse last 5 years question paper pdf english,last 10 years hs question paper west bengal board pdf গত 10 বছরের hs প্রশ্নপত্র পশ্চিমবঙ্গ, বাংলায় HS আগের বছরের প্রশ্ন, 2015 সপ্তাহের প্রশ্নপত্র, hs শেষ 5 বছরের প্রশ্ন, hs WBCHSE প্রশ্নপত্র, পশ্চিমবঙ্গ ক্লাস 12 আগের বছরের প্রশ্ন, H.S. প্রশ্নপত্র,wbchse বিগত 5 বছরের প্রশ্নপত্র pdf ক্লাস 12 উত্তর সহ,,wbchse গত 10 বছরের প্রশ্নপত্র pdf উত্তর সহ,wbchse বিগত বছরের প্রশ্নপত্র pdf ডাউনলোড,wbchse এর গত 10 বছরের প্রশ্নপত্র,গত 5 বছরের h প্রশ্নপত্র পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড,গত 10 বছরের এইচএস প্রশ্নপত্র পিডিএফ ডাউনলোড করুন,wbchse গত 5 বছরের প্রশ্নপত্র পিডিএফ ইংরেজি,গত 10 বছরের প্রশ্নপত্র ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড পিডিএফ,Bengali Suggestion 2023Bengali Suggestion 2023 Class 12Bengali Suggestion 2023 Higher SecondaryBengali Suggestion 2023 HSClass 12 Bengali Suggestion 2023Class 12 Bengali Suggestion 2023 Download PDFClass 12 Bengali Suggestion 2023 PDFClass 12 Bengali Suggestion 2023 PDF DownloadClass 12th Bengali Suggestion 2023Class 12th Bengali Suggestion 2023 Download PDFClass 12th Bengali Suggestion 2023 PDFClass 12th Bengali Suggestion 2023 PDF DownloadHigher Secondary Bengali Suggestion 2023Higher Secondary Bengali Suggestion 2023 Download PDFHigher Secondary Bengali Suggestion 2023 PDFHigher Secondary Bengali Suggestion 2023 PDF DownloadHS Bengali Suggestion 2023HS Bengali Suggestion 2023 DownloadHS Bengali Suggestion 2023 Download PDFHS Bengali Suggestion 2023 FREE PDFHS Bengali Suggestion 2023 PDF DownloadHS Bengali Suggestion 2023PDFWB Board Class 12 Bengali Suggestion 2023WB Board Class 12th Bengali Suggestion 2023WB Board Higher Secondary Bengali Suggestion 2023WB Board HS Bengali Suggestion 2023WB Class 12 Bengali Suggestion 2023WB Class 12th Bengali Suggestion 2023WB Higher Secondary Bengali Suggestion 2023WB HS Bengali Suggestion 2023WBCHSE Board Class 12 Bengali Suggestion 2023WBCHSE Board Class 12th Bengali Suggestion 2023WBCHSE Board Higher Secondary Bengali Suggestion 2023WBCHSE Board HS Bengali Suggestion 2023WBCHSE Class 12 Bengali Suggestion 2023WBCHSE Class 12th Bengali Suggestion 2023WBCHSE Higher Secondary Bengali Suggestion 2023WBCHSE HS Bengali Suggestion 2023WBSHSE Board HS Bengali Suggestion 2023West Bengal Board Class 12 Bengali Suggestion 2023West Bengal Board Class 12th Bengali Suggestion 2023West Bengal Board Higher Secondary Bengali Suggestion 2023West Bengal Board HS Bengali Suggestion 2023West Bengal Class 12 Bengali Suggestion 2023West Bengal Class 12th Bengali Suggestion 2023West Bengal Higher Secondary Bengali Suggestion 2023West Bengal HS Bengali Suggestion 2023উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন